সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৩:০৯:৩৩ এএম
শিরোনাম নিম্ন আদালতে ব্যাপক রদবদল        নোয়াখালী হাতিয়ায় ফসলি জমিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন       ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন       পশ্চিম তীরের ক্রসিংয়ে গুলিতে ৩ ইসরায়েলি রক্ষী নিহত: সেনাবাহিনী       মালয়েশিয়ায় এক দিনেই আটক দুই শতাধিক বাংলাদেশি       শেষ মুহূর্তের গোলে হারল বাংলাদেশ        ছাত্রলীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি গ্রেপ্তার      
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা
নিজস্ব প্রতিবেদক :
Published : Saturday, 5 February, 2022
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা

সাধারণত গ্রন্থাগার কে বলা জ্ঞানের গুদাম ঘর। কবিগুরুর ভাষায় যেখানে অতীত বর্তমানের সংযোগ ঘটে। পূর্বের যেকোনো 
সময় বা কালের সংস্কৃতি সভ্যতা ও ইতিহাসের ধারাবাহিক বর্ণনা পুস্তক আকারে আমরা গ্রন্থাগারে গেলেই খুঁজে পাই। কোন কোন বিজ্ঞজন গণগ্রন্থাগার কে গণমানুষের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অবহিত করেছেন। সমাজের প্রাচীনতম এই অবাধ শিক্ষালয়টি আজ পুঁজিবাদী শ্রেণীর করাল গ্রাসে জাদুঘরে ঠাঁই নিয়েছে। ১৮ কোটি মানুষের দেশে কিছু সংখ্যক গ্রন্থাগার এখনো বিরল প্রজাতির প্রাণীর মত বেঁচে আছে নাছোড়বান্দার মত কিছু পাগল মানুষের ভালবাসায় লাইফ সাপোর্টে। উন্নত জীবন ব্যবস্থার বাস্তবতায় জাতিসংঘ কর্তৃক "টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা" নির্ধারণ প্রেক্ষাপটে আজ যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত লক্ষ্য পূরণে কাজ করছেন, সেখানে বারংবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের। কিন্তু রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্লিপ্তায় ২০১৯ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রশ্ন উঠছে "জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র" নামক প্রতিষ্ঠানটির আদৌ দরকার আছে কিনা! 

সংস্থাটির নিষ্ক্রিয়তা এতোটাই খারাপ অবস্থায় দাঁড় হয়েছে যে স্বাধীনতার ৫০ বছর  হলেও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ছুঁতে পারেনি তার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা। নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই রাষ্ট্র এই সংস্থা কে গঠন করেছে। 
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য- ১. জ্ঞান ও মননশীলতার উৎকর্ষ সাধনে গ্রন্থ ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডকে তরান্বিত করা; ২. সাহিত্যমনস্ক ও জ্ঞানসমৃদ্ধ জাতি ও সমাজ গঠন করা;
৩. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসরকারীভাবে গ্রন্থাগার স্থাপনে জনসাধারনকে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করা;
৪. বেসরকারী গ্রন্থাগারের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করা;
৫. লেখক, কবি ও সাহিত্যিককে তার সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ও প্রসার ঘটাতে উদ্বুদ্ধ করা; ৬. পুস্তক বা গ্রন্থ প্রকাশনা শিল্পকে উৎসাহিত ও লাভজনক শিল্পে পরিণত করা; ৭. পুস্তক বা গ্রন্থের প্রকাশ, প্রকাশনা বৃদ্ধি তরান্বিত করা; ৮. বইমেলাকে দেশ ও দেশের বাইরে সর্বস্তরের জনসাধারনের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া; ৯. সর্বসাধারনের মধ্যে লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও তাদের প্রকাশিত পুস্তক বা গ্রন্থের পরিচিতি বাড়ানো; ১০. জনসাধারনকে গ্রন্থ পাঠে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কার্যাবলী
১. জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে সৃজনশীল প্রকাশনাকে উৎসাহিতকরণ ও পাঠক সৃষ্টি করা।
২. গ্রন্থন্নোয়নে পাঠ সামগ্রীর উপর গ্রন্থপঞ্জি প্রকাশ এবং এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রকাশ করা।
৩. বই বা গ্রন্থ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা ও তৎসম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা।
৪. আন্তর্জাতিক/বিভাগীয়/জেলা/উপজেলা পর্যায়ে বইমেলার আয়োজন করা।
৫. গ্রন্থাগার সেবার মান উন্নয়ন ও জনসাধারণের মধ্যে পাঠ সচেতনতা সৃষ্টি করা।
৬. গ্রন্থ প্রকাশনাকে উৎসাহিত করার জন্য শ্রেষ্ঠ প্রকাশককে পুরস্কৃত করা।
৭. শিল্পসম্মত ও উন্নতমানের পুস্তক মুদ্রণকে উৎসাহিত করার লক্ষে শ্রেষ্ঠ মুদ্রাকরকে পুরস্কৃত করা।
৮. বেসরকারি গ্রন্থাগারসমূহের মধ্যে আর্থিক অনুদান ও বই প্রদান করা।
৯. বেসরকারি গ্রন্থাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাগারের কর্মকর্তা/কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
১০. গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ে সরকারকে সহায়তা প্রদান করা।
১১. গ্রন্থবিষয়ক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেমিনার/মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা।
১২. মাসিক পত্রিকা ‘বই’ মূদ্রণ করা।
১৩. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষ দিবস উদযাপনের আয়োজন করা।

উপরোক্ত উদ্দেশ্য ও কার্যবলি সম্পাদন করতে যে পরিমান বাজেট দেওয়ার দরকার তাঁর সিকি পার্সেন্টও দেওয়া হয় না সংস্থাটি কে। নেই পর্যাপ্ত জনবল ও জেলা/উপজেলা পর্যায়ে কোন দপ্তর। 

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর নামক এক জন বিচ্ছিন্ন সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জেলা পর্যায়ে ৭১ টি সরকারি গণগ্রন্থাগার রয়েছে। যেখানে বছরে গুটিকয়েক দিবস উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।  আর পুরষ্কার হিসেবে কিছু বই দেওয়া ছাড়া কার্যত আর কোন কার্যাবলি দৃষ্টি গোচর হয় না। এখানেও নেই পর্যাপ্ত জনবল ও সৃজনশীল কার্যাবলি সম্পাদন করার বাজেট। নেই স্থানীয় পাঠক, লেখক ও কবি-সাহিত্যিকদের যোগ সাজোশ। এককথায় প্রতিষ্ঠানটি গণমুখী হতে পারেনি।

২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রীসভার এক পরিপত্রের মাধ্যমে ৫ ফেব্রুয়ারি কে ‘খ’ শ্রেণি ভুক্ত করে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ এর স্বীকৃতি দেয়া হয়। তারপর ২০১৮ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি এক যোগে সারা দেশ ব্যাপী ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ উদযাপিত হয়ে আসছে। এবার ২০২২ সাল ৫ম বারের মতো উদযাপন হতে যাচ্ছে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’। বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশজ মিডিয়াও নির্জীব। সাধারণত রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন দিবস উদযাপনের মোটিব হয় একটি সুনির্দিষ্ট দিন/সময় কে কেন্দ্র করে সারাবছর সমগ্র দেশে সে বিষয়ে কর্মতৎপরতা প্রবাহমান রাখা। কিন্তু "খ" শ্রেণীভুক্ত "জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস" গণমানুষহীন পেশাজীবি কিছু সংখ্যক সরকারি চাকুরিজীবী গ্রন্থাগারিক নিয়ে দায়সারাভাবে পালিত হয় জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে । জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের কিছু ফুলঝুরি দেওয়া বক্তব্য থাকলেও সারাবছর তা বাস্তবায়নে নেই কোন পদক্ষেপ। জেলা পর্যায়ে আগত অতিথি ও উপস্থিতিদের চোখে মুখে শুধুই হতাশা এখন আর পাঠক নেই, এখন আর পাঠক নেই  এই বলে বলে। এই হচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের বাস্তবতা। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর কর্তৃক উদযাপিত "জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস-২০২০" এর স্লোগান ছিল "মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার- গ্রামে গ্রামে পাঠাগার" ; ২০২১ সালের স্লোগান ছিল "মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার- ঘরে ঘরে পাঠাগার" আর ২০২২ সালের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে "সুবর্ণজয়ন্তীর অঙ্গীকার- ডিজিটাল গ্রন্থাগার"। এ সকল  গালভরা স্লোগানে স্লোগানে হয়তো ২৪ ঘণ্টার দিবসটি ভাল কাটে কিন্তু কার্যত স্লোগানের সাথে বাস্তবতার কোন যোগসূত্র নেই। বছরজুড়ে নেই স্লোগান বাস্তবায়নের পদক্ষেপ।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গুলো এখন পরিণত হয়েছে চাকুরীজীবি তৈ


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সর্বশেষ সংবাদ
⇒সর্বশেষ সব খবর...
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮-০২-৪১০৬৪১১১, ৪১০৬৪১১২, ৪১০৬৪১১৩, ৪১০৬৪১১৪, ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৯৬১১৬০৪,হটলাইন : +৮৮-০১৯২৬৬৬৭০০৩-৪
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected], [email protected], web : www.gonokantho.com