শিরোনাম |
সঞ্জীব চৌধুরীর চলে যাওয়ার ১৭ বছর
বিনোদন ডেস্ক:
|
গানের পরতে পরতে প্রেম ও দ্রোহ! সমাজের যেকোনো অসঙ্গতিতে মুখ লুকিয়ে ফিরে যাননি, কথা বলেছেন গানে। আগুনের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি রংপুরে পুলিশের হাতে ধর্ষিত তরুণী ইয়াসমিনও হয়েছেন গানের বিষয়বস্তু। আবার টিনেজ প্রেমিকের অনুভূতি নিয়েও তিনি গেয়ে উঠেছেন ‘এই নষ্ট শহরে নাম না জানা যে কোন মাস্তান’ বা ‘রিক্সা কেন আস্তে চলে না’-এর মতো কালজয়ী গান। ‘গাড়ি চলে না চলে না চলে না রে, গাড়ি চলে না’। বাউল শাহ আব্দুল করিমের লেখা বাংলাদেশের গানের ইতিহাসে এক অনন্য সৃষ্টি। এই গানের মধ্য দিয়ে দেহতত্ত্বের বিষয়টি এতো চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে যা অনবদ্য। আর এই গানটি বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে বিশেষ ভূমিকা রাখা মানুষটির নাম সঞ্জীব চৌধুরী। গীতিকবি, সুরকার, গায়ক ও সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরীর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর রাত ১২টা ১০ মিনিটে তিনি মারা যান। তার সৃষ্ট অজস্র গান এখনও নবীনদের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। সঞ্জীবের গাওয়া ‘বায়োস্কোপের নেশায় আমায় ছাড়ে না’, ‘ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও’, ‘আমি তোমাকেই বলে দেবো’, ‘হৃদয়ের দাবি’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিলো চাঁদ’, ‘রিকশা’ ইত্যাদি সব শিরোনামের গানগুলো আজও নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে। এখনো লোকমুখে ফিরে ফিরে বাজে তার গান। নানা অনুষ্ঠান-কনসার্টে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের মুখে শোনা যায় এসব গান। গানের মানুষ হিসেবেই সমাদৃত হলেও দারুণ মেধাবী সঞ্জীব চৌধুরী পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তবে তার পৈতৃক নিবাস বিশ্বনাথ উপজেলার দাশঘর গ্রামে। সেখানকার স্থানীয় শরৎ রায় চৌধুরী ছিলেন সঞ্জীব চৌধুরীর দাদা। তিনি ছিলেন গোপাল চৌধুরী ও প্রবাসিনী চৌধুরী দম্পতির সপ্তম সন্তান। সঞ্জীব ছিলেন খুব মেধাবী ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলেন। স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষালয় শেষে তিনি হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৯৭৮ সালে এসএসসি পাস করে দারুণ রেজাল্ট দিয়ে সবাইকে চমকে দেন। পরে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন ১৯৮০ সালে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা সঞ্জীব চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে চান্স পান মেধা তালিকায় নাম উঠিয়ে। কিন্তু গণিতের প্রতি তার কোনো ভালো লাগা ছিলো না। তাই বিষয় পরিবর্তন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে আশির দশকে। ছাত্র থাকাকালীন বাম ঘরানার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৯-৮০ সালে তিনি ঢাকা কলেজের বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সংস্কৃতি সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন সঞ্জীব চৌধুরী। শিক্ষার পর্ব শেষ করেই দৈনিক উত্তরণ পত্রিকায় যোগ দিয়ে সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিন’সহ বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেছেন। ‘শঙ্খচিল’ নামের দলে সংগীতচর্চা শুরু হয় তার। তিনি পিংক লয়েড, বব ডিলানের গানে প্রভাবিত। তার গানেও এদের ছায়া পড়েছে। বিশেষ করে ফোক গানের প্রতি ছিলো তার ব্যাপক ভালো লাগা। ১৯৯৬ সালে সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘দলছুট’ গঠন করেন। পরবর্তীতে সঞ্জীব চৌধুরীর কথা ও বাপ্পার সংগীতায়োজন দলটিকে ভিন্ন মাত্রা দেয়। তিনি গিটারসহ আরো নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। সংগীতশিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীর প্রয়াণদিবসে গাইবেন শিল্পীরা। তার স্মরণে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সঞ্জীব চত্বরে ‘সঞ্জীবসন্ধ্যা’র আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন। এ আয়োজনে থাকবেন অনিন্দ্য বিশ্বাস, ক্রানুপ্রু মার্মা লোটাস, তাসনিম ইজাজ, অং অং, সায়েম জয়, তুহিন কান্তি দাস, ব্লাইন্ডস্পট, আজওয়াড, লানজু, শান্তনু ও অমি, সূর্য পলাশ, শাহনেওয়াজ তুষার, তথাপি আজাদ, সৈকত আমীন, সোহেল রায়হান, মুইজ মাহফুজ, মারুফ মৃন্ময়, জয়ন্ত পাল জয় ও ইমরান হোসাইন এবং সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন পারফরম্যান্স টিম। |