শিরোনাম |
মংডু শহরও পুরোপুরি দখল নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
|
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে মংডু শহরও পুরোপুরি দখলে নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির। দীর্ঘ চলমান দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধেকালে গত রবিবার মংডুতে সামরিক জান্তর বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশন (নাখাখা-৫)-এর শেষ পোস্টটিও দখল করা হয়েছে বলে এক বিবৃতে জানিয়েছেন আরাকান আর্মি। এতে নাফ নদীর আরাকান জলসীমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌকা, বোড, লঞ্চ, জাহাজ সহ কোনপ্রকার নৌযান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যাতে আরাকান-বাংলাদেশ জলসীমানা অতিক্রম করতে না পারে। এদিকে বাংলাদেশি জেলেসহ সকল নৌযান চলাচলকারীদেরও সেদিকে না যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন। নবাগত ইউএনও বলেন, ‘ গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমার জান্ত বাহিনী ও আরকান আর্মির সঙ্গে টেকনাফ অঞ্চল এলাকায় সেদেশে যুদ্ধ চলছে। ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি আরাকান আর্মি টেকনাফ বর্ডার এলাকার সেদেশের সীমান্ত এলাকাটি পুরোপুরি তাঁরা (আরকান আর্মি) দখলে নিয়ে গতকাল থেকে আরকান আর্মি সেদেশের জলসীমানায় নাফনদীতে সকল নৌযান চলাচলের তাদের সীমানায় নিষেজ্ঞা দেয়। তাই আমরাও টেকনাফের ফিশিং ট্রলার মালিকদেরকে অবগত করিছি, নাফ নদী সীমান্ত এ মুহুর্তে অতি ঝুঁকিপূর্ণ তাই সেখানে কোন ট্রলার না যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রয়েছে।’ অন্যদিকে বিবৃতিতে আরকান আর্মি বলেন, ‘গতকাল সকালে আরাকান আর্মি সফলভাবে আরাকান রাজ্যের মংডু অঞ্চলে অবস্থিত সন্ত্রাসী ফ্যাসিবাদী সামরিক জান্তার বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশন (নাখাখা-৫)-এর শেষ পোস্টটি দখলে নিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে, সন্ত্রাসী ফ্যাসিবাদী সামরিক জান্তার সশস্ত্র সদস্যরা, যারা তাদের মিত্র দলগুলির সঙ্গে মিলে, যার মধ্যে ইসলামী চরমপন্থী সশস্ত্র দলগুলি আরএসও, আরএসএ, এবং এআরএ রয়েছে তাদের মধ্যে কিছু সশস্ত্র সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছিল। তারা এখনও এলাকায় লুকিয়ে আছে। এ অস্ত্রধারীরা অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, নাখাখা-৫ এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসী জান্তার সদস্যসহ আরএসও, আরএসএ, এআরএ এবং অন্যান্য সশস্ত্ররা নৌযান ব্যবহার করে নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশ-আরাকান সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করছে। অতএব, সামরিক প্রয়োজনীয়তা এবং জননিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে, সমস্ত নদী পরিবহন নাফ নদীতে (আরাকান অঞ্চল) ৮ ডিসেম্বর বিকেল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান চলাচল স্থগিতের ঘোষনা দেন।’ টেকনাফ সীমান্তের বসবাসকারীরা বলছে, গত কয়েকদিন ধরে রাখাইন মংডুতে চলমান যুদ্ধে তীব্রতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ফলে গোলার শব্দে আতঙ্কের মধ্য রয়েছে টেকনাফ সীমান্তের বসবাসকারীরা। রাখাইনে অধিকাংশ জায়গা আরকান আর্মির দখলে ছিল। তবে মংডু শহরের কিছু অংশ জান্ত সরকারে নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেটির কারনে যুদ্ধ চলছিল দুই পক্ষে। ইতি মধ্য সেটিও আরকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে।’ নাফনদীতে আরাকান আর্মির নিষেজ্ঞা বিষয়টি জেনেছি উল্লেখ করে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের চট্টগ্রাম মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সোয়াইব বিকাশ বলেন, ‘বাংলাদেশ জলসীমানায় যে-কেউ হোক, আমরা কাউকে ঢুকতে দেবেনা। জালিয়ার দ্বীপ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত নাফনদ-সাগরে আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। পাশাপাশি জেলেদের জলসীমানা অতিক্রম না করতে বলা হচ্ছে। টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘মংডু শহরও এখন আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে শুনেছি। এছাড়া জেলেদের ওপার সীমান্তে না যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন,‘আমরাও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে শুনেছি আরাকান আর্মি মংডু শহরও দখলে নিয়েছে। তবে এ নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। কেননা এবার আরাকান আর্মি সেদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জান্তা সরকারের সাথে যুদ্ধের কথা বলে বিতাড়িত করার শঙ্কা রয়েছে। কেননা কেউ রোহিঙ্গাদের জাতী হিসেবে স্বৃকিতি দেয়নি।’ রাখাইনে রাজ্যে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সীমান্তে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ টেকনাফ ২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিকনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, ‘সীমান্তে যেকোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও নিরাপত্তায় নাফ নদী ও স্থলে বিজিবির সদস্যরা সোচ্চার রয়েছে। এছাড়া সীমান্তে যেকোনো মোকাবেলা করার জন্য বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। |