শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:০২:৫৭ এএম
শিরোনাম আয়নাঘর নিয়ে যা বললেন আজহারী       ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬৭টি কার্তুজসহ দুই গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার        বাঁশজানি সীমান্ত থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা সরাল বিএসএফ       দেশের সব আয়নাঘর খুঁজে বের করা হবে : প্রেস সচিব       জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২,৮০০ কোটি টাকা চেয়েছে ইসি       তিস্তা ইস্যুতে এবার মাঠে নামছে বিএনপি       এস আলম পরিবারের ৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ      
খাগড়াছড়ির পাহাড়ী এলাকায় চলছে উলু ফুল সংগ্রহের মৌসুম
নিজস্ব প্রতিবেদক :
Published : Saturday, 11 January, 2025

খাগড়াছড়ির পাহাড়ী এলাকায় চলছে উলু ফুল সংগ্রহের মৌসুম

খাগড়াছড়ির পাহাড়ী এলাকায় চলছে উলু ফুল সংগ্রহের মৌসুম

 জেলার পাহাড়ী এলাকায় এখন চলছে উলু ফুল (ঝাডু ফুল) সংগ্রহের মৌসুম।পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় ঝাড়ু ফুলটি উলু ফুল নামেই বেশি পরিচিত। সমতলের মানুষ ও ঝাড়ু ফুল’ নামেই এটিকে চেনেন।এর প্রয়োজনীয়তার শেষ নেই। চাহিদা ঘরে ঘরে। ঘরের নিত্য দিনের সঙ্গী। মূলত: ঘরদোর ঝাড়ু দিতেই এটি প্রধানতম ব্যবহার হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ না হলেও রয়েছে এ ফুলের বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য এলাকায় উলু ফুলের বিশাল বাজার হয়েছে। অনেকেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ আর্থিক সচ্ছলতাএসেছে।পাহাড়ে গজিয়ে উঠা এক শ্রেণির বিরুৎ জাতীয় গাছ উলু ফুল (ঝাড় ফুল)। বিশেষ করে পাহাড়ের ঢালে এসব গাছের বিস্তার হয়ে থাকে। একটি গাছ থেকে একটি ফুল দেয়ার পর গাছটি মারা গেলেও বৃষ্টি পড়ার পর গাছের গুড়ি থেকে আবারো নতুন করে গাছ গজায়। স্থানীয় চাকমা ভাষায় ‘চড়ন্দরা’ এবং ত্রিপুরা ভাষায় ‘চন্দ্রা’ বলা হলেও উলু ফুল বা ঝাড়ু ফুল নামেই এর বেশী পরিচিত এখানে। প্রতি বছর শীত আসার শুরুতে এ উলু ফুল ফুটতে থাকে এবং শীতের মাঝামাঝি ও শেষ দিকে এ ফুল সংগ্রহ করা হয়। চাহিদা বেশি থাকায় পাহাড় পর্বতের ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ উলু ফুল। বাণিজ্যিক চাষাবাদ না হলেও পাহাড়ের জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়া এ ফুলের রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। এক সময় এ উলু ফুলের তেমন গুরুত্ব না থাকলেও বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশে রয়েছে এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা। পাশাপাশি তৈরি হয়েছে উলু ফুলের বিশাল বাজার। স্থানীয় মানুষ তা সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরাও ঝাড়ু ফুলের ব্যবসায় লাভের মুখ দেখছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এ পেশায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার নাড়াইছড়ি রেঞ্জের প্রায় ৪৫ হাজার ১১২ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে উলু ফুলের (ঝাড় ফুল) বিস্তার। খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় ঝাড়ুফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ বা উৎপাদনের প্রয়োজন পড়ে না। পাহাড়ের জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে এ ফুল। স্থানীয় মানুষ তা সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। সবাই প্রয়োজন মতো কিনে নেন বাড়ির জন্য । আর ব্যবসায়ীরা কিনেন ব্যবসা করার জন্য। এতে করে পাহাড়ের দরিদ্রের কর্ম সংস্থানের সুযোগসহ অথর্নৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে । বিশেষত মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ১৮-২০টি ঝাড়ু ফুলের কাঠি দিয়ে একটি আটি বাধেঁন। আর এক একটি আটি বিক্রি হয় ৭/৮ টাকায়। ব্যবসায়ীরা এগুলো কিনে প্রথমে শুকিয়ে থাকেন। পরে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এসে প্রতি আটি ঝাড়ু ফুল নিয়ে যান ১০/১২ টাকা দরে কিনে জীপ বা ট্রাকের মাধ্যমে সমতলের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান। অন্যান্য বছরের মত এবারও খাগড়াছড়ি জেলা বিভিন্ন এলাকার উৎসাহী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঝাড়ু ফুলের ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। বাণিজ্যিকভাবে ফুলঝাড়ু’র সুফল দেখে অনেকেই আবার নিজের অব্যবহৃত টিলা-পাহাড়ে ফুলঝাড়ু আবাদের সম্ভাবনা দেখছেন। পাহাড়ের মাটি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা ফুলঝাড়ু’র মাধ্যমে বদলে যেতে পারে প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রাও। খাগড়াছড়ির ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া জানান, ঝাড়ু ফুল লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে এ ফুল সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমরা সরবরাহ করে থাকি। কাঁচা ঝাড়ু ফুল শুকিয়ে আটি বেঁধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করি। এতে করে এ অঞ্চলে পিছিয়ে পরা পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ ঝাড়ু ফুল সরবরাহ করতে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। ব্যবসায়ী গুলজার হোসেন ও মোঃ জাকির জানান, জানান, উলু ফুলের চাহিদা শুধু দেশে নয় বিদেশেও এ ফুলের ঝাড়ু রপ্তানী হওয়ার কারনে ফুলের ঝাড়ে’র ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি ট্রাকে ১৮ থেকে ২০ হাজার আটি উলু ফুল পরিবহন করা যায়। ট্রাক প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভ হওয়ার কথা জানান এ ব্যাবসায়ীরা।এখন লাভজনক এ ব্যবসায় অনেকে আসতে চায়। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে অনেকে আসতে পারছেনা। যদি এ খাতে লোন দেয়ার ব্যবস্থা করে তাহলে সরকার এ ব্যবসা থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ,এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম, জানান, ঝাড়ুফুলের আবাদ না হলেও এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা খুবই ভালো। বিনা পরিচর্যায় এর চাষ করা যায়। শুধু লাগিয়ে দিলেই হয়ে যাচ্ছে। এখনও কোন সার পানি কীটনাশক কিছুই লাগছে না। অথর্কারী ফসল হিসেবে ঝাড়ু ফুলের চাষ করা যায় কিনা কৃষি বিভাগ তা পরিকল্পনা করছে । খাগড়াছড়ি বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ ফরিদ মিয়া বলেন, গত অর্থ বছরে উলু ফুল থেকে খাগড়াছড়ি বনবিভাগ ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করেছে। উলু ফুলের চাষ বৃদ্ধি পেলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে বনবিভাগের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে। এদিকে সরকারী উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করা হলে উলু ফুল রপ্তানী করে বছরে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
⇒সর্বশেষ সব খবর...
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮-০২-৪১০৬৪১১১, ৪১০৬৪১১২, ৪১০৬৪১১৩, ৪১০৬৪১১৪, ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৯৬১১৬০৪,হটলাইন : +৮৮-০১৯২৬৬৬৭০০৩-৪
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected], [email protected], web : www.gonokantho.com