সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০১:০৪:১৫ এএম
শিরোনাম নোয়াখালীর বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও ব্যবসায়ী কামাল আর নেই       জামায়াতকে ‘ধর্ম ব্যবসায়ী-প্রতারক’ আখ্যা বিএনপি নেতা বাচ্ছুর।       গণহত্যার বিচার ও মৌলিক সংস্কার ছাড়া জনগণ নির্বাচন চায় না : ড. মাসুদ        প্রধান উপদেষ্টা কাল কাতার যাচ্ছেন       রাষ্ট্রের দুই অঙ্গের সমমর্যাদায় বিচার বিভাগকে প্রতিষ্ঠিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে : প্রধান বিচারপতি       প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন       আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করলেন নুর      
বাংলাদেশের হামজাবরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
Published : Tuesday, 18 March, 2025
বাংলাদেশের হামজাবরণ

বাংলাদেশের হামজাবরণ

হামজা দেওয়ান চৌধুরী, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে ধারে খেলা লেস্টার সিটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ফুটবলার। যিনি আাসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপের তৃতীয় রাউন্ডে ‘সি’ গ্রুপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠ মাতাবেন। জাতীয় দলের পক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচকে সামনে রেখে গতকাল বাংলাদেশে পা রাখেন হামজা। এদিন বেলা পৌনে ১২টায় সিলেট ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। হামজার আগমনকে কেন্দ্র করে ওসমানি বিমানবন্দরের আশেপাশে বিরাজ করছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই তারকা ফুটবলার বিমান থেকে অবতরণের পর তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্মকর্তারা। এর বেশ কিছুক্ষণ পর বেলা সাড়ে ১২টার পর বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ইংরেজিতে ব্যক্ত করেন হামজা। তিনি, ‘অবিশ্বাস্য, অবিশ্বাস্য। অনেক দিন পর আসা হলো...এখানে আসতে পেরে রোমাঞ্চ অনুভব করছি।’ এরপর আসন্ন ম্যাচ নিয়ে নিজের লক্ষ্যের কথা বাংলায় বলতে বললে হামজা বলেন,‘ইনশাআল্লাহ, আমরা জিতবো। বাংলাদেশের সঙ্গে আমার বড় স্বপ্ন আছে। ইনশাআল্লাহ আমরা জিতে পরবর্তী পর্বে যেতে পারবো।’
হামজার সঙ্গে এই সফরে এসেছেন স্ত্রী, সন্তান ও তার মা। ওসমানি বিমানবন্দর থেকে তারা সরাসরি চলে যান হামজা দেওয়ান চৌধুরির পিত্রালয় হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে। সেই জায়গাটা আগের দিন থেকেই সেজে ছিল হামজার আগমনের অপেক্ষায়। বিমানবন্দর থেকে ঘণ্টা দু’য়েক সড়ক পথ পাড়ি দিয়ে হামজা তার শেকড়ে ফিরেন। নিজ গ্রাম হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটে পৌঁছার পর সেখানে তাকে দেওয়া হয় সংবর্ধনা। বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে পিত্রালয়ে পৌঁছান হামজা চৌধুরী। পরে বাড়ির পার্শ্ববর্তী মাঠেই সংবর্ধনার আনুষ্ঠানিকতা সারেন স্নানঘাট গ্রামবাসী। এভাবেই বাংলাদেশের হামজা বরণ হয়। হামজা যখন নিজ বাড়িতে পৌঁছান তখন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে যাওয়া বাফুফের সাত কর্মকর্তা দুই ভাগে রাজধানী ঢাকায় ফিরে যান। বাংলাদেশে হামজার আগমনের জন্য বাফুফের চার নির্বাহী সদস্যের প্রতিনিধি দল (ইকবাল হোসেন, গোলাম গাউস, সাখওয়াত হোসেন ভূইয়া শাহীন ও কামরুল ইসলাম হিল্টন) রোববার সিলেট ও হবিগঞ্জ পরির্দশন করেন। হামজাকে সিলেট বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়ে তারা আর হবিগঞ্জ যাননি।
সিলেট থেকেই ঢাকায় ফেরার কারণ সম্পর্কে বাফুফে প্রতিনিধি দলের সদস্য গোলাম গাউস বলেন,‘হামজার বাবাই আমাদের অনুরোধ করেছেন পুনরায় হবিগঞ্জে না যাওয়ার। হামজার চাচা, চাচাতো ভাইরা রয়েছে বাড়ির সার্বিক ব্যবস্থাপনায়। আমরা রোববার হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সিলেট বিমানবন্দর থেকে বাড়ি পর্যন্ত পুলিশ প্রটোকলে হামজা বাড়ি পৌঁছাবে আবার সেখানেও সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে নিরাপত্তার দায়িত্বে।’ বাফুফের একটি সুত্র জানায়, হামজাকে নিয়েই আজ ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা ছিল এই প্রতিনিধি দলের সদস্যদের। বাফুফে কর্তারা গত পরশু সিলেট বিমানবন্দরে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই পরিকল্পনা অবশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতিই সৃষ্টি হয়েছিল বিমানবন্দরে। হামজাকে ভিআইপি জোনে রাখা হলেও সার্বক্ষণিক লোকজন তাকে ও তার পরিবারকে ঘিরেই ছিল। সেই ভিড় এড়াতে হামজার দুই হাত ধরে বাফুফের দুই সদস্যের হাটার দৃশ্যও দেখা গেছে। হামজার জন্য দেশের সকল গণমাধ্যম মুখিয়ে ছিল। সেই গণমাধ্যমের জন্যও সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা করতে পারেনি বাফুফে। বাংলাদেশে হামজার মিডিয়ার সঙ্গে অভিষেক হয়েছে ধস্তাধস্তির মধ্যেই। বাংলাদেশ ফুটবলের এত গুরুত্বপূর্ণ দিনে ছিলেন না বাফুফের মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বাবু। যিনি মাস খানেক আগে কয়েকটি গণমাধ্যমে হামজাকে রাজসিক সংবর্ধনা দেয়ার কথা বলেছিলেন। এরপর থেকেই একেবারে অদৃশ্য হয়ে পড়েন বাবু। কাল ওসমানি বিমানবন্দরে মিডিয়া সেশনের সময় হামজার সামনেই বাফুফে কর্তারা নিজেদের মধ্যে ঠেলা-ঠেলি করেছেন। বিমানবন্দর একটি সংরক্ষিত জায়গা। সেখানেই যখন অব্যবস্থাপনা হবিগঞ্জে হামজার গ্রামের বাড়িতে সেই শঙ্কার মাত্রা আরো বেশি থাকার কথা। হামজার পৌঁছার আগেই তার বাড়ির সামনে সংবর্ধনা মঞ্চে হাজারো মানুষের ভিড় ছিল। যদিও স্থানীয়দের সচেতনতায় হবিগঞ্জের বাড়িতে হামজার নিরাপত্তা নিয়ে অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদি তা ঘটতো তাহলে এর দায় এড়ানোর সুযোগ ছিলনা বাফুফের। বাফুফে কর্তারা হামজাকে হবিগঞ্জে পৌঁছে দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা করে কাল রাতেই সিলেট থেকে ঢাকার ফ্লাইটে ফিরতে পারতেন। সাত জনের কেউই (বিশেষত দায়িত্ব নিয়ে যাওয়া চার জন) এই পথে হাটেননি। কাল সকালে হামজাকে বরণ করতে সিলেট যাওয়া তিন জন (ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ, সত্যজিত দাশ রূপু ও মঞ্জুরুল করিম) ঢাকার বিমান ধরেছেন হামজা হবিগঞ্জ রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই। সিলেট থেকে হবিগঞ্জে যান বাফুফের মিডিয়া এক্সিকিউটিভ খালিদ মাহমুদ ও এক অফিস সহকারী।
হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশে আগমন ও সূচি নিয়ে মূলত কাজ করছিলেন বাফুফের সভাপতি ও জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়াল নিজেই। ব্যক্তিগত সফরে তাবিথ আউয়াল ও নির্বাহী সদস্য ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ ইংল্যান্ড ছিলেন মাস দু’য়েক আগে। তখন দুই জন হামজা ও তার পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন। তাবিথের পাশাপাশি সবুজও হামজার আগমন ইস্যুতে শুরুর দিকে কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে হামজার আগমন ও অভ্যর্থনার পরিকল্পনা-সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভাল করছিলেন বাফুফের সহ-সভাপতি সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম। কিন্তু কাল তিনি সশরীরে সিলেটে উপস্থিত ছিলেন না!
ট্রফি জয়, বিশেষ কোনো ব্যক্তির আগমন উপলক্ষ্যে বিমানবন্দর বা ফেডারেশন ভবনে বাফুফের অব্যবস্থাপনা নিয়মিত ঘটনাই। বাংলাদেশের জন্য খেলতে হামজা আসছেন এটা ফুটবলের অনেক বড় ঘটনা। এই উপলক্ষ্যে বাফুফে আনুষ্ঠানিক কোনো কমিটি করেছে বলে জানা যায়নি। হামজার আগমনে উদ্ভুত অব্যবস্থাপনা এবং অর্ভথ্যনা সংক্রান্ত বিষয়ে বাফুফের অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে দেশে ফেরার পর হামজা চৌধুরী আজ রাতে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন। আগামীকাল বাংলাদেশ দলের ফটোসেশন রয়েছে। এরপরই সংবাদ সম্মেলন। পর দিন অর্থাৎ ২০ মার্চ দলের সঙ্গে ভারতে উড়াল দেবেন হামজা। শিলংয়ে ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সর্বশেষ সংবাদ
⇒সর্বশেষ সব খবর...
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর: মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : প্ল্যানার্স টাওয়ার, ১০তলা, ১৩/এ বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮-০২-৪১০৬৪১১১, ৪১০৬৪১১২, ৪১০৬৪১১৩, ৪১০৬৪১১৪, ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৯৬১১৬০৪,হটলাইন : +৮৮-০১৯২৬৬৬৭০০৩-৪
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected], [email protected], web : www.gonokantho.com